হাঁস মুরগি পালন করে কর্মসংস্থানের নতুন পথে শিরিন

হাঁস মুরগি পালন করে কর্মসংস্থানের নতুন পথে শিরিন,পড়ালেখা মাধ্যমিকের শেষ প্রান্তে এসে থমকে যায়। বাড়িতে বসে থাকা আর টুকটাক কাজ করেই সময় চলছিল। একদিন একটি বেসরকারি সংস্থার এক নারী কর্মকর্তা এলেন বাড়িতে। আলাপের পর সুযোগ করে দিলেন হাঁস-মুরগি লালন-পালনের প্রশিক্ষণের। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেলেন আত্মকর্মের নতুন পথের খোঁজ। দরিদ্র পরিবারে নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার, নিজের মতো বাঁচার একটা স্বপ্ন তৈরি হলো শিরিন বেগমের (২১)।

 

হাঁস মুরগি পালন করে কর্মসংস্থানের নতুন পথে শিরিন

 

হাঁস মুরগি পালন করে কর্মসংস্থানের নতুন পথে শিরিন

শিরিন বেগমের বাড়ি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের গয়ঘর গ্রামে। বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িতে পাশাপাশি বেশ কটি কাঁচা ঘর। এক পাশে মুরগি লালন-পালনের শেড। সেটি খালি। দু-এক দিন আগে মুরগি বিক্রি করা হয়েছে। নতুন করে আবার বাচ্চা তোলার প্রস্তুতি চলছে। সেখানেই দেখা হয় শিরিন বেগমের বাবা গিয়াস উদ্দিন ও বড় ভাই দীপন আহমদের সঙ্গে।

শিরিন বেগম জানালেন, চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। দুই ভাইয়ের মধ্যে একজন ইলেকট্রিশিয়ান ও একজন গাড়িচালক। এখন আট সদস্যের পরিবার। বাবা একসময় মাছের ব্যবসা করতেন। এখন বাড়িতেই থাকেন। তাঁর (শিরিন) তেমন কিছু করার ছিল না। অবসরের ফাঁকে ১০ থেকে ১৫টি দেশি মুরগি ও ৪টি হাঁস লালন-পালন করতেন।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এন্টারপ্রাইজ (আইডিই) নামের একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা নাসিমা বেগম তাঁদের বাড়িতে আসেন। সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের আর্থিক সহযোগিতায় আইডিইর উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় হাঁস-মুরগি পালনের প্রশিক্ষণের পরামর্শ দেন ওই কর্মকর্তা। এরপর প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে সাত দিনের প্রশিক্ষণ নেন। এই প্রশিক্ষণ তাঁকে নতুন পথের খোঁজ দেয়।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

শিরিন বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রামে আইডিই কাজ করত জানতাম। কিন্তু কার সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করব, ধারণা ছিল না। একদিন আইডিইর নাসিমা বেগম বাড়িতে এলেন। তাঁর মাধ্যমে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেলাম। এরপরই বাণিজ্যিকভাবে মুরগি পালনের ভাবনা আসে।’প্রশিক্ষণ শেষে বড় ভাই দীপন আহমদের সহযোগিতায় শিরিন বেগম ৩০০ ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা তুলে বাণিজ্যিকভাবে পোলট্রি ব্যবসা শুরু করেন।

ব্যবসা শুরুর পর আইডিই ১২ হাজার টাকা এককালীন অনুদান দেয়। প্রথমবারেই সাত হাজার টাকা লাভ করেন। এরপর শেডে তোলেন ৪০০ সোনালি মোরগ। এবার ১০ হাজার টাকা লাভ হলো। আর থামেননি। নতুন করে মুরগি তোলেন। মুরগি লালন-পালন পরিবারে সচ্ছলতার আলো ফেলেছে।  শিরিন বেগম বলেন, ‘প্রশিক্ষণের আগে মনে হয়নি আমি পোলট্রির ব্যবসা করব। আইডিইর সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় এই কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এই কাজ করতে আমার ভালো লাগে। আশা আছে ব্যবসা বড় করব। পরিবারের সবাই আমাকে সহযোগিতা করে।’

 

 

হাঁস মুরগি পালন করে কর্মসংস্থানের নতুন পথে শিরিন

 

শিরিন বেগমের বাবা গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘ঘরও বই থাকতা আছলা (ঘরে বসেছিল)। গরিব মানুষ। এটা (পোলট্রি ব্যবসা) করায় চালু থাকলা (সচল থাকল)। সে কাজ করায় আমার ভালো লাগে।’ কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৪ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে গয়ঘর গ্রাম। ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান  বলেন, শিরিন বেগম আইডিইর সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই কাজ (পোলট্রি ব্যবসা) করছেন। আগে দেশি মুরগি নিয়ে ছোট আকারে ছিল। আগের থেকে পরিবার সচ্ছল হয়েছে।

আরও পড়ুন:

Leave a Comment